চলন্ত বাইক থেকে ফেলে মারধর, সাংবাদিক নাদিমের অবস্থা সংকটাপন্ন

Passenger Voice    |    ১১:২৫ এএম, ২০২৩-০৬-১৫


চলন্ত বাইক থেকে ফেলে মারধর, সাংবাদিক নাদিমের অবস্থা সংকটাপন্ন

অফিসের কাজ শেষে রাত ১০টার দিকে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম ও তার সহকর্মী আল মুজাহিদ বাবু। পথে বকশিগঞ্জ পাথাটিয়ায় পৌঁছালে অতর্কিত সামনে থেকে আঘাত করে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে ফেলে দেওয়া হয় নাদিমকে।

এরপর ১০-১২ জন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সড়ক থেকে মারধর করতে করতে টেনে হিঁচড়ে এক অন্ধকার গলিতে নিয়ে এলোপাতাড়ি ভাবে আঘাত করে তাকে। সেসময় সহকর্মী মুজাহিদ তাদের আটকাতে গেলে তাকেও মারধর করে তারা।
পরে স্থানীয় বাসিন্দাসহ মুজাহিদ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু আঘাত গুরুতর হওয়ায় তাকে জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয় উন্নত চিকিৎসার জন্য।

গতকাল বুধবার (১৪ জুন) রাত ১০টার দিকে বকশিগঞ্জের পাথাটিয়ায় ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের বুথের সামনে ঘটে যাওয়া এমন হামলার নৃশংসতার বিবরণ দিয়েছেন সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিমের সহকর্মী আল মুজাহিদ বাবু।

তিনি বলেন, সাধুরপারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহমুদ আলম বাবুর বিরুদ্ধে নাদিমসহ আমরা কয়েকজন নিউজ করেছিলাম সেখান থেকেই তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আছেন আমাদের ওপর। পরে আমাদের নামে ডিজিটাল আইনে মামলাও করেছিলেন তিনি। সেই মামলা গতকাল ময়মনসিংহের সাইবার ট্রাইব্যুনাল খারিজ করে দিয়েছেন। এ নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেওয়া হয়েছিল। এর দুই তিন ঘণ্টা পর রাতে অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে নাদিমের ওপর হামলা হয়।

তিনি আরও বলেন, নাদিমকে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে গলা ধরে ফেলে দিয়ে তারপর পাশের একটি অন্ধকার গলিতে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে মারধর করে মাহমুদ আলম বাবুর লোকজন। ঘটনার সময় ওই গলিতে অন্ধকারে আড়ালে দাঁড়িয়েছিলেন চেয়ারম্যান মাহমুদ আলম বাবু। তার ছেলে ফয়সাল, রিফাত, রেজাউল, মনির, সাইদসহ আরও কয়েকজন ছিল সেসময়। মারধরের সময় আমি আটকাতে গেলে আমাকেও তারা মারে। পরে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে চেয়ারম্যানের সন্ত্রাসী বাহিনী চলে যায়। পরে নাদিমকে উদ্ধার করে হাসাপাতালে নেওয়া হয়।

আহত সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিমের স্ত্রী বলেন, আমার স্বামীকে তারা অনেক মেরেছে। মুখে, মাথায়,  হাত-পাসহ শরীর বিভিন্ন স্থানে আঘাত রয়েছে এবং দাতঁ ভেঙে গেছে। হত্যার উদ্দেশ্যেই তার ওপর হামলা করা হয়েছে। রাতে অচেতন হয়েছে এখনো জ্ঞান ফেরেনি। তাকে নিয়ে ময়মনসিংহ হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি। তার অবস্থা ভালো না, ডাক্তার বলেছে আইসিইউতে নিতে হবে। তার ব্রেইনের আঘাত গুরুতর।  জামালপুর হাসপাতাল থেকে রেফার্ড করে দিয়েছে। আমি আমার স্বামীর ওপর হামলার বিচার চাই।

আহত সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম এর জামালপুর জেলা করেসপন্ডেন্ট ও জেলা অনলাইন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি।

অভিযুক্তরা হলেন- সাধুরপারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহমুদ আলম বাবু, তার ছেলে রিফাত, রেজাউল, মনির, সাইদ।

হামলার স্থলের সিসিটিভির ফুটেজ এসেছে গণমাধ্যমের কাছে সেখানে দেখা গেছে, গোলাম রাব্বানী নাদিম রাস্তা দিয়ে আসছিল। এ সময় হঠাৎ চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে কলার ধরে তাকে ফেলে দেয় সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা এক ব্যক্তি। পরে আরও কয়েকজন এসে নাদিমকে মারতে মারতে অন্ধকার গলিতে নিয়ে যায়।

এ বিষয়ে সাধুরপারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহমুদ আলম বাবুর মোবাইল ফোনে কল করা হলেও কথা বলা যায়নি।

জামালপুর প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান বলেন, আমি হামলার ঘটনা জানার পরপরই সেই থানার অফিসার ইনচার্জের (ওসি) সঙ্গে কথা বলেছি এবং নাদিমের হাসপাতালের পরিস্থিতি সম্পর্কে খবর রাখছি। আমাদের পক্ষ থেকে ওসিকে জানিয়েছি আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত আসামিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় আমরা বড় আন্দোলনে যাবো। ইতোমধ্যে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পেয়েছি।

বকশিগঞ্জ থানার ওসি সোহেল রানা বলেন, ঘটনার পর খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। এছাড়া হাসপাতালে গিয়েও আহত সাংবাদিককে দেখে এসেছি। সে এখন জামালপুর হাসপাতালে আছে৷ তার অবস্থা এখন কিছুটা উন্নতির দিকে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত রেজাউল নামের একজনকে আমরা চিহ্নিত করতে পেরেছি৷ তাকে আটকের চেষ্টা চলছে। এছাড়া সিসিটিভির একটি ফুটেজ আমাদের কাছে এসেছে। সেটিকে পর্যালোচনা করছি। অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে দ্রুত আটক করার প্রক্রিয়া চলছে। 

সূত্র: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

প্যা/ভ/ম